সুশাসন
বর্তমানে বহুল আলোচিত সুশাসন প্রত্যয়টি দুইটি ভাগ করলে দেখা যায়, শাসন একটি বিষয় আর সুশাসন আরেকটি বিষয়। শাসন বলতে, জনগণ কিভাবে শাসিত হয়, কিভাবে রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তা নির্দেশ করে। আর সুশাসন বলতে, রজনৈতিক ব্যবস্থার সামার্থ্য, কার্যকারিতা, কর্মদক্ষতা গুণগতমানকে নির্দেশ করে।
সুশাসন হলো রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের , সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ক।
অন্যভাবে বলা যায়, আইনের শাসন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমানাধিকার, জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা এবং কার্যকর সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ ও দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের কাঙ্খিত সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে সুশাসন।
বিশবব্যাংকের মতে, সুশাসন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়।সুশাসনের উপাদান নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মতামত
১৯৯৫ সালে এডিবি সুশাসনের চারটি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছে। যথা- ১) জবাবদিহিতা, ২)
অংশগ্রহণ, ৩) ভবিষ্যদ্বাণী এবং ৪) স্বচ্ছতা।
১৯৯৭ সালে ইউএনডিপি সুশাসনের ৯ টি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছে। যথা- ১) অংশগ্রহণ, ২)আইনের শাসন, ৩) স্বচ্ছতা, ৪) সংবেদনশীলতা, ৫) ঐকমত্যের ঝোঁক, ৬) ন্যায্যতা, ৭) কার্যকারিতা ও দক্ষতা, ৮) জবাবদিহিতা এবং ৯) কৌশলগত দূরদর্শিতা।
১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) সুশাসনের চারটি উপাদানের কথা বলেছে। যথা- ১) দায়িত্বশীলতা, ২) স্বচ্ছতা, ৩) আইনের শাসন এবং ৪) অংশগ্রহণ।
জাতিসংঘ সুশসনের ৮ টি উপাদানের কথা বলেছে। যথা- ১) অংশগ্রহণ, ২) আইনের শাসন, ৩) স্বচ্ছতা, ৪) সংবেদনশীলতা, ৫) ঐক্যমতের ঝোঁক, ৬) ন্যায্যতা ও একীভূতকরণ, ৭) কার্যকারিতা ও দক্ষতা এবং ৮) জবাবদিহিতা।
সুশাসনের বৈশিষ্ট্য
সুশাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো হচ্ছে:-
১) স্বচ্ছতাঃ সাধারণত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে আইনগত পদ্ধতি অবলম্বন করাই হলো স্বচ্ছতা। সরকারের প্রতিটি বিভাগ বিশেষ করে সরকারি কর্মকান্ডের পরিপূর্ণ প্রকাশ, যা থেকে জনগণ সরকারের কর্মকান্ড থেকে স্পষ্ট ধারণা নিতে পারে।২) জবাবদিহিতাঃ একজন সরকারি কর্মকর্তা বা শাসন বিভাগের কর্মকর্তার উপর আরোপিত ক্ষমতার সুষ্ঠ লিখিত জবাবই হলো জবাবদিহিতা। সরকার, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি তাদের সব কাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থকে তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
৩) দায়িত্বশীলতাঃ সরকারি কর্মচারীকে তার উপর অর্পিত কাজ সম্পাদনের জন্য দায়ী করা হয়। দায়িত্বশীলতা প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত- ক) আইনগত দায়িত্বশীলতা এবং খ) রাজনৈতিক
দায়িত্বশীলতা। রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক) ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা এবং যৌথ দায়িত্বশীলতা।
দায়িত্বশীলতা। রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক) ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা এবং যৌথ দায়িত্বশীলতা।
৪) বৈধতাঃ সরকারের বৈধতা, সরকারের গৃহীত নীতি, কর্মসূচী ও সিদ্ধান্তের বৈধতা সুশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কেননা অবৈধ সরকার স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচারী ও দূর্নীতিপরায়ন হয়।
৫) আইনের শাসনঃ আইনের শসন বলতে আইনের চোখে সকলের সমতার কথা বোঝানো হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
৬) জনগণের অংশগ্রহণঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল জনগণকে নিয়ে একটি পরিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সুশাসনের আরো বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- ন্যায়পরায়ণতা, লিঙ্গ বৈষম্যের অনুপস্থিতি, সুশীল সমাজ, স্বাধীন প্রচার মাধ্যমে, দুর্নীতিমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জনবান্ধব প্রশাসন, জীবন ঘনিষ্ঠ ও কল্যাণমূলক, সমতা, ঐক্যমত, সংবেদনশীলতা, জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কার্যকারিতা ও দক্ষতা ইত্যাদি।
মোটকথা সুশাসন বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায়, যেখানে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রয়েছে, স্বাধীন বিচার বিভাগ ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা আছে, আইনের শাসন আছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
(মোঃ হেলাল উদ্দিন, ৩৩ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা)
No comments:
Post a Comment