Sunday, September 1, 2024

অনার্স ৪র্থ বর্ষের ভাইভা পরীক্ষায় যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে নিজের মেধাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে সর্বোচ্চ নম্বর নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কিছু বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হয়। ভাইভা বোর্ডে কী করা যায়, আর কী করা যায় না- এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। শুধু উত্তর জানলেই হয় না, উত্তর দেওয়ার এবং নিজেকে তুলে ধরার কৌশল জানতে হয়। ভাইভার জন্য কি পড়বেন, ভাইভা বোর্ডে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এবং কোন পরিস্থিতিতে কী করবেন তা নিয়ে এই আলোচনা।

 

কি কি পড়বেন

যেহেতু অনার্স ৪র্থ বর্ষের ভাইভা তাই পড়ালেখাটা ৪র্থ বর্ষের কোর্সগুলো থেকেই বেশি করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো, আপনি যদি নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তবে লিখিত পরীক্ষার জন্য যে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং ক্লাসে শিক্ষক যা যা পড়িয়েছেন তাতেই আপনার ভাইভা প্রস্তুতি হয়ে যাবে। শুধু দরকার হবে একবার রিভিশন দেয়া।

তবে ভাইভা নিয়ে যেহেতু আমাদের ভীতি থাকে তাই ভাইভার আগে অবশ্যই পড়ালেখা করতে হয়। এক্ষেত্রে যা যা পড়তে পারেন- যে বিষয়ে অনার্স করেছেন সেই বিষয়ের বেসিক কোর্সগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। চার বছরে যে কোর্সগুলো পড়া হয়েছে তার নাম, ৪র্থ বর্ষের কোর্সগুলোর নাম এবং যে কোর্সের পরীক্ষা বেশি ভাল হয়েছে ঐ কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেনা। কেননা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপানাকে একটা সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে যাতে ভাইভা বোর্ডকে আপনার অনূকুলে নিতে পারেন। ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষায় আসা অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নত্তোরগুলো ভাল করে পড়তে হবে।

সমসাময়িক বিষয়, খেলাধুলা, বিভিন্ন দিবস, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, পছন্দের কবি-সাহিত্যিক, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, প্রসিদ্ধ স্থান ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। মোটকথা, ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে, আপনি কি পড়বেন আর কি পড়বেন না। তবে যেহেতু এটা একাডেমিক তথা আনার্সের ভাইভা তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোর্সগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখার জন্য যা যা পড়া দরকার তা আপনাকে পড়তে হবে।

 

ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে

অনেকেই ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে বইপত্র পড়তে থাকেন। কেউ কেউ আবার সাক্ষাৎকার শেষ করে বেরিয়ে আসা প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন, কোন কোন প্রশ্ন করা হলো। এ দুটি প্রবণতার কোনোটিই ঠিক নয়। কারণ, বোর্ডে কোন প্রশ্ন করা হবে, তা সাধারণত আগে থেকে ধারণা করা যায় না। তা ছাড়া অন্য প্রার্থীর প্রশ্ন শুনে নিজেকে অস্থির করে তোলারও প্রয়োজন নেই। ভাইভার জন্য পড়াশোনা যদি করতে হয়, আগেই করতে হবে। আর বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়, তা জানার জন্য আগেই পুরোনো প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন।

 

ভাইভা বোর্ডে ঢোকার সময়

ভাইভা বোর্ডে ঢোকার সময় অবশ্যই অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলায় ‘আমি কি ঢুকতে পারি’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো বাক্য বলা ভালো। অনেক সময় বোর্ডের সদস্যরা বেশ দূরে অবস্থান করেন। সে ক্ষেত্রে একটু জোরে আরেকবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যথেষ্ট উচ্চস্বরে দ্বিতীয়বার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি বোর্ডের কোনো সদস্য অনুমতি না দেন, তবে দরজা ধরেই অপেক্ষা করতে হবে। ঢোকার অনুমতি পেলে বোর্ড সদস্যদের কাছাকাছি যাওয়ার পর সালাম বা আদাব দিতে হবে, কিংবা ‘শুভ সকাল’, ‘শুভ বিকেল’ এ রকম সম্ভাষণ করতে হবে। তাঁরা বসার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত বসা যাবে না। সাধারণত বসতে চাওয়ার জন্য আলাদা অনুমতি নেওয়ার দরকার হয় না। তবে আপনাকে বসতে বললে বসার আগে অবশ্যই ‘ধন্যবাদ’ জানাবেন।

 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখা

ভাইভা বোর্ডে সাধারণত লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, কলম এবং অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হয়। কাগজপত্রগুলো এমনভাবে রাখবেন, যাতে যেকোনোটি সহজেই বের করে দেখানো যায়। সাধারণত নিজের কাছেই ফাইল ও অন্যান্য কাগজ রাখতে হয়। কোনো কাগজ দেখতে না চাইলে আগ বাড়িয়ে দেখানোর দরকার নেই।

 

পোশাক

মৌখিক পরীক্ষার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে হালকা রঙের সুতি শাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ির প্রধান রং সাদা হতে পারে। কানে-হাতে খুবই হালকা গয়না ব্যবহার করা উচিত। শাড়ির সঙ্গে উঁচু স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেটি যেন হাইহিল না হয়। মুখে খুব হালকা মেকাপ করতে পারেন। চুল খোলা না রেখে বেণি বা খোঁপা করা যেতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে শার্ট-প্যান্ট বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

ছেলেরা স্ট্রাইপ করা যেকোনো শার্ট পরতে পারেন। প্যান্টের রং কালো হতে পারে। জিন্সের প্যান্ট কিংবা কেডস না পরাই ভালো। কালো চামড়ার জুতা মোজাসহ পরবেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে কোট ও টাই পরার দরকার নেই। পোশাক অবশ্যই পরিষ্কার ও ইস্তিরি করা থাকবে। চুল ছোট করে কাটবেন, দাড়ি শেভ করবেন। যারা দাড়ি রাখেন, তারা সাইজ করে নেবেন। এক কথায় আপনাকে যেন সভ্য মনে হয়। অনেকে ঘড়ি পড়ে থাকেন এবং বারবার ঘড়ির দিকে তাকান, এমন করা থেকে বিরত থাকুন।

 

বসা ও কথার ভঙ্গি

চেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা করে বসবেন। হাত রাখবেন কোলের ওপর, কেনোভাবেই টেবিলের ওপর হাত রেখে কথা বলা যাবে না। মাথা নিচু করে রাখা যাবে না। চোখ রাখতে হবে বোর্ড সদস্যদের চোখের দিকে। চশমা ব্যবহার করলে চশমা নিচু করে ওপরের ফাঁক দিয়ে তাকানো যাবে না। যিনি প্রশ্ন করবেন মূলত তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েই কথা বলতে হবে।

তবে উত্তর দীর্ঘ হলে অন্যদের দিকেও কমবেশি তাকাতে হবে। কথা বলার সময় বেশি উঁচু গলায় কথা বলা যাবে না। আবার এমন মৃদু স্বরেও বলা ঠিক নয়, যাতে অন্যদের শুনতে সমস্যা হয়। প্রমিত উচ্চারণে কথা বলা দরকার। ভাইভা বোর্ডে পালস একটু দ্রুতই চলে, তাই স্বাভাবিক গতির চেয়ে একটু ধীরে কথা বলতে হয়। হাতে একটি রুমাল বা টিস্যু রাখতে পারেন। হঠাৎ হাচি/কাশি এলে রুমাল/টিস্যুতে ঢেকে দেবেন।

 

উত্তর পারা না-পারা

উত্তর পারা না-পারার ওপর ভাইভার নম্বর পুরোপুরি নির্ভর করে না। মঙ্গোলিয়ার মুদ্রার নাম কী, কিংবা মরক্কোর রাজধানীর নাম কী, এসব উত্তর না পারলেও ক্ষতি নেই। তবে কোন প্রশ্ন আপনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেটি বোর্ড সদস্যরা বিশেষভাবে লক্ষ করেন। উত্তর দেওয়ার সময় আপনার ব্যক্তিত্বের সবল দিকগুলোর প্রকাশ ঘটান, দুর্বল দিকগুলো আড়াল করুন। প্রশ্নের উত্তর যদি সুনির্দিষ্ট এককথায় হয়, আর সেটি যদি আপনার জানা না থাকে, তবে বিনীতভাবে বলুন ‘এটি আমার জানা নেই’। তবে আলোচনার যোগ্য কোনো প্রশ্নই ছেড়ে দেবেন না, অবশ্যই কিছু না কিছু বলার চেষ্টা করবেন।

 

সাক্ষাৎকার শেষে বেরিয়ে আসা

ভাইভা শেষ করে বেরিয়ে আসার সময় বিশেষভাবে লক্ষ করবেন কোনো কাগজপত্র ফেলে আসলেন কি না। চলে আসার আগে বলিষ্ঠ গলায় ‘ধন্যবাদ’ বলবেন। বেরিয়ে আসার সময় সরাসরি পেছন দিকটা বোর্ড সদস্যদের দিকে ফিরিয়ে চলে আসবেন না। ঢোকার এবং বেরিয়ে আসার সময় আপনার হাঁটার পদক্ষেপ দৃঢ় হবে।

 

শেষ কথা

সবচেয়ে বড় কথা পুরো সময়টাই আত্মবিশ্বাসী থাকবেন, তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতির কারণ হতে পারে। বোর্ড সদস্যরা কোনো বিষয়ে হাসতে পারেন, কিন্তু তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনার হাসা ঠিক হবে না। তাই বলে পুরো সময়টা একেবারে গুরুগম্ভীর হয়ে থাকারও দরকার নেই। সাবলীলভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কোনো বাক্য অসম্পূর্ণ রেখে কথা থামিয়ে দেবেন না। আবার যে উত্তরটি এক শব্দে দেওয়া যায়, সেটি এক শব্দে না দিয়ে পূর্ণ বাক্যে উত্তর দেবেন। কোনো ধরনের মুদ্রাদোষ থাকলে তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

 

(মোঃ হেলাল উদ্দিন – শিক্ষক, লেখক ও গবেষক)

I‡qe‡cBR, †dmeyK Ges BDwUD‡e †jL‡Ki mv‡_ hy³ n‡Z mvP© Kiæb-

www.helaluddin565.blogspot.com

www.youtube.com/helaluddin565

www.facebook.com/helaluddin565

www.facebook.com/group/helaluddin565

 

ivó«weÁvb wel‡qi mKj †Kv‡m©i n¨vÛ‡bvU, K¬vm jKPv‡ii wfwWI Ges cix¶v msµvšÍ mKj Z_¨ cZ d‡jv Kiæb-

www.rastrobiggyanpath.blogspot.com (ivóªweÁvb cvV)

www.facebook.com/rastrobiggyanpath (ivóªweÁvb cvV)

www.youtube.com/rastrobiggyanpath (ivóªweÁvb cvV)

 

Awf‡hvM, mgm¨v, civgk© I AwfgZmn †h‡Kvb cÖ‡qvR‡b

*     01580-651815

 

No comments:

Post a Comment