জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য টার্ম পেপার জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই টার্ম পেপার এর জন্য শিক্ষার্থীদের ৫০ মার্ক নির্ধারিত। টার্ম পেপার জমা না দিলে একজন শিক্ষার্থীর মাস্টার্স পাস হবে না। তাই টার্ম পেপার জমা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে টার্ম পেপার কি ও কেন? এবং টার্ম পেপার লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করবো।
টার্ম পেপার কি
টার্ম পেপার এর বাংলা অর্থ হলো বিশ্লেষকমূলক রচনা বা গবেষণামূলক কাজ, যা একাডেমিক টার্ম ধরে শিক্ষার্থীদের দ্বারা লেখা হয়। যে কোন একটি বিষয়ের উপর বিশ্লেষণধর্মী ও গবেষণামূলক একটি প্রবন্ধকে একাডেমিক ভাষায় টার্ম পেপার বলে। ২০১৩-১৪ সেশন হতে জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ের মাস্টার্স এ টার্ম পেপার এ্যাড করা হয়। টার্ম পেপার মূলত কলা অনুষদ, ব্যবসা অনুষদ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের জন্য ৫০ নম্বরের একটি বিশেষ কর্ম।
টার্ম পেপার কিভাবে তৈরী করতে হয়
মাস্টার্স শেষ পর্ব (নিয়মিত) শিক্ষার্থীদের টার্ম পেপার (Term Paper) তৈরি করতে হয়। টার্ম পেপার যেহেতু একাডেমিক পেপার তাই এটি লেখার নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা ফলো করতে হবে। এই নিচের নিয়মগুলো মেনে টার্ম পেপারটি তৈরি করা যেতে পারে।
· পরিচ্ছন্ন একটি কভার পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
· টার্ম পেপারটি ২৫০০-৩০০০ ওয়ার্ডের হতে হবে।
· টার্ম পেপারটি ২৫-৩০ পেইজের হতে পারে। তবে ২৫ পেইজের নিচে হয় না।
· টার্ম পেপার অবশ্যই এ ফোর (A4) সাইজের সাদা কাগজের একপাশে লিখতে হবে।
· টার্ম পেপার সাধারণত হাতে লিখতে হয়, তবে শিক্ষক চাইলে কম্পিউটার কম্পোজ করা যাবে।
· টার্ম পেপারটি পরিষ্কার ও পরিমার্জিত রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাম পাশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা রেখে অথবা মারজিন কাটতে হবে। অযথা কোন ডিজাইন না করাই ভালো।
· টার্ম পেপার লিখতে অবশ্যই কালো কালির বল পয়েন্ট ব্যবহার করতে হবে। পয়েন্ট হাইলাইট করতে সবুজ কালি/ পেন্সিল ব্যবহার করা যেতে পারে।
টার্ম পেপারে যা যা লিখতে হবে
একটি আদর্শ টার্ম পেপারে যে সকল বিষয় লিখতে হয় তাহলো-
· বাংলা ও ইংরেজি সংমিশ্রণে লেখা যাবেনা। সুন্দর করে বাংলায়/ ইংরেজিতে লিখতে হবে।
· টার্ম পেপারে ঘোষণাপত্র/ লেখকের কথা থাকতে হবে।
· তত্ত্বাবধায়কের কথা/ প্রত্যয়ন পত্র থাকতে হবে।
· কৃতজ্ঞতা স্বীকার থাকতে হবে।
· সারসংক্ষেপ লেখা থাকতে হবে।
· টার্ম পেপারে অবশ্যই একটা সূচিপত্র থাকতে হবে।
· মূল অংশে রেফারেন্সসহকারে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা থাকবে।
· উপসংহার লিখতে হবে।
· সর্বশেষ গ্রন্থপুঞ্জি/ রেফারেন্স/ তথ্যসূত্র লিখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, টার্ম পেপার কারও থেকে কপি করে লেখা উচিত নয়। নিজের মেধা আর সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের বই, জার্নাল, পত্র-পত্রিকা ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরী করতে হবে। তাতে টার্ম পেপার সবার থেকে আলাদা হবে এবং নিজের অনেক কিছু শেখা হবে।
কভার পেইজে যা যা লিখতে হয়
বিষয়/ শিরোনামঃ যে বিষয়ে টার্ম পেপার লিখতে বলা হয় তার শিরোনাম
উপস্থাপনায়
শিক্ষার্থীর নামঃ
শ্রেণী এবং রোল নং-
রেজিষ্ট্রেশন নং এবংশিক্ষাবর্ষ-
বিভাগের নামঃ
কলেজের নামঃ
তত্তাবধায়ক
তত্ত্বাবধায়ক/ শিক্ষকের নামঃ
তত্ত্বাবধায়ক/ শিক্ষকের পদবীঃ
কলেজের নামঃ
জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়/ কলেজের লোগো
বিশ্ববিদ্যালয়/ কলেজের নামঃ
জমাদানের তারিখঃ
টার্ম পেপারের ঘোষণাপত্রে যা লিখতে হয়
আমি (আপনার নাম) ঘোষণা করছি যে, শিরোনাম/ বিষয়….. শীর্ষক টার্মপেপারটি সম্পূর্ণরুপে আমার নিজস্ব, একক ও মৌলিক গবেষণা কর্ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মাস্টার্স শেষ বর্ষের (বিভাগের নাম) জন্য দাখিলকৃত। এছাড়া এই টার্ম পেপারটি অন্য কোন প্রকাশনার জন্য উপস্থাপন করি নাই।
শিক্ষার্থীর নামঃ
শ্রেণী এবং রোল নং-
রেজিষ্ট্রেশন নং এবংশিক্ষাবর্ষ-
বিভাগের নামঃ
কলেজের নামঃ
প্রত্যয়নপত্রে যা লিখতে হয়
এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্তির লক্ষ্যে (কলেজের নাম) এর (বিভাগের নাম) এর (জমাদানকারীর নাম) এর দাখিলকৃত (বিষয়ের শিরোনাম) এই টার্ম পেপারটি আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে লিখিত/ সম্পাদন করা হয়েছে। আমি এই টার্ম পেপারটি পাঠ করেছি ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের উদ্দেশ্য উপস্থাপন করতে অনুমোদন করছি।
তত্ত্বাবধায়ক/ শিক্ষকের নামঃ
তত্ত্বাবধায়ক/ শিক্ষকের পদবীঃ
কলেজের নামঃ
কৃতজ্ঞতা স্বীকারে যা লিখতে হয়
সর্বপ্রথম আমি পরম করুণাময়ের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যিনি আমাকে এ গবেষণা কর্মটি সম্পন্ন করার ধৈয্য ও শক্তি দিয়েছেন। আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি (বিভাগের নাম) এবং (শিক্ষকের নাম, যিনি তত্ত্বাবধায়ক) যিনি আমাকে এই গবেষনা কর্মটি সম্পন্ন করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন। আমি বিশ্বাস করি স্যারের দিকনির্দেশনা আমার টার্ম পেপার কর্মটি সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ স্যারকে আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য। আমি স্যারের সর্বময় মঙ্গল কামনা করছি। (যদি আরো কিছু লিখতে চাও, লেখা যাবে। বিশেষ কারো সহায়তা পেলে তা উল্লেখ করা)।
শিক্ষার্থীর নামঃ
শ্রেণী এবং রোল নং-
রেজিষ্ট্রেশন নং এবংশিক্ষাবর্ষ-
বিভাগের নামঃ
কলেজের নামঃ
সার-সংক্ষেপে যা লিখতে হবে
সার-সংক্ষেপ বলতে আমরা বুঝি সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এই অংশে পুরো টার্ম পেপারটি সম্পর্কে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতে হবে যেন তত্ত্বাবধায়ক/ পরীক্ষক খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে, কোন বিষয়ের উপর টার্ম পেপারটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
সূচিপত্র লেখার নিয়ম
সূচিপত্রে উপরে বর্ণিত সকল বিষয় এক এক পেইজ রোমান সংখ্যায় (i, ii, iii, iv) সাজাবেন তারপর ক্রমিক নং দিয়ে ১, ২, ৩, ৪ এভাবে ভূমিকা পেইজ হতে শুরু করে উপসংহার পর্যন্ত এবং সর্বশেষ পেইজে যে তথ্যসূত্র লিখা হবে সেই পেইজ পর্যন্ত পেইজ নম্বর দিতে হবে।
মূল আলোচনা
এই অংশে টার্ম পেপারের শিরোনাম সম্পর্কিত তথ্যাদি বিচার, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। এটিই মূলত টার্ম পেপারের মূল অংশ। এখানে যা থাকতে হবে-
- ভুমিকা(Introduction):এই অংশে বিষয়ের পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা, গবেষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করতে হবে।
- সাহিত্য পর্যালোচনা(Literature Review):এই অংশে নির্ধারিত টার্ম পেপারের বিষয়ের উপর পূর্ববর্তী কোন গবেষণা আছে কিনা বা থাকলে তার ফলাফল সম্পর্কে লিখতে হবে। বর্তমান গবেষণার সাথে পূর্ববর্তী কোন গবেষণা থাকলে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
- পদ্ধতি(Methodology):এই অংশে গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে। সেই সাথে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে হবে।
- ফলাফল (Results):এই অংশে গবেষণার ফলাফল ও তথ্য বিভিন্ন টেবিল, চিত্র বা গ্রাফ ব্যবহার করে প্রদর্শন করতে হবে।
- আলোচনা(Discussion):এই অংশে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। এবং গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য পরামর্শ প্রদান করতে হবে ।
- উপসংহার(Conclusion):এই অংশে গবেষণার ফলাফল উল্লেখপুর্বক সামগ্রিক পর্যালোচনা করতে হবে।
গ্রন্থপুঞ্জি/ তথ্য সূত্র (Reference): References are the source materials. অর্থাৎ গবেষণা করার সময় ও তা লেখার সময় যেসকল জায়গা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে তার সঠিক সূত্র লিখতে হবে। যদি কোন বই থেকে নিয়ে থাকেন তাহলে সেই বইয়ের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে ।
পরিশিষ্ট (Appendix): The appendix of a paper consists of supporting information for the research that is not necessary to include in the text. অর্থাৎ এই অংশে পেপারে লিখিত অতিরিক্ত তথ্য, তথ্য সেট, সার্ভে ফর্ম ইত্যাদি সঠিকভাবে লিখতে হবে।
গ্রন্থপঞ্জি/ তথ্যসূত্র লেখার নিয়ম
টার্ম পেপারে বর্ণিত সকল তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সে বিষয়ে লিখতে হবে। গ্রন্থপঞ্জি/ তথ্যসূত্র যেভাবে লিখতে হয়-
- লেখকের নাম।
- বই/ প্রবন্ধের নাম।
- প্রকাশের স্থান সাথে কোলন চিহ্নঃ
- প্রকাশনীর নাম,
- প্রকাশের সাল।
উদাহরণস্বরুপ- মোঃ হেলাল উদ্দিন। সামাজিক গবেষণা পদ্ধতির সহজপাঠ। ঢাকাঃ পাঠপ্রকাশ, ২০২৩।
আশাকরি লেখাটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের টার্ম পেপার জমা দেওয়ার জন্য একটি সুন্দর টার্ম পেপার লিখতে সহায়ক হবে।
(মোঃ হেলাল উদ্দিন – শিক্ষক, লেখক ও গবেষক)
I‡qe‡cBR, †dmeyK Ges BDwUD‡e †jL‡Ki mv‡_ hy³ n‡Z mvP© Kiæb-
www.helaluddin565.blogspot.com
www.facebook.com/helaluddin565
www.facebook.com/group/helaluddin565
ivó«weÁvb wel‡qi mKj †Kv‡m©i n¨vÛ‡bvU, K¬vm †jKPv‡ii wfwWI Ges cix¶v msµvšÍ mKj Z_¨ †c‡Z d‡jv Kiæb-
www.rastrobiggyanpath.blogspot.com (ivóªweÁvb cvV)
www.facebook.com/rastrobiggyanpath (ivóªweÁvb cvV)
www.youtube.com/rastrobiggyanpath (ivóªweÁvb cvV)
No comments:
Post a Comment