১। আইন প্রণয়ন ক্ষমতাঃ সংবিধানের ৬৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নামে একটি আইনসভা থাকবে এবং এর উপর প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত হবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ যেকোনো নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করতে পারে। সংসদ আইনের মাধ্যমে যেকোনো সংস্থা বা ক র্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান, বিধি, উপ- বিধি ও প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা দিতে পারে। সংসদ প্রণীত আইনে রাষ্ট্রপতি ১৫দিনের মধ্যে সম্মতি দান করবেন।
২। সরকার গঠন বিষয়ক ক্ষমতাঃ সরকার গঠনে সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংসদের আস্থাভাজন ব্যক্তই প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং তিনি মন্ত্রীসভা গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদের আস্থা হারালে সরকারের পতন হয়।
৩। অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রের অর্থ কিভাবে ব্যয়িত হবে তাঁর ওপর সংসদ দৃষ্টি নিবন্ধ রাখে। সংসদের অনুমোদন ও কর্তৃত্ব ব্যতীত কোনো প্রকার ব্যয় করা যায় না। আবার কোনো কর আরোপ বা কর সংগ্রহ করতেও সংসদের অনুমতি নিতে হয়। প্রত্যেক অর্থবছরে সরকার সংসদে বাজেট উপস্থাপন করে। সংসদ অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী সরকারকে চলতে হয়।সংযুক্ত তহবিলের ব্যয়সমূহের উপরও সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হয়। মোটকথা রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সকল ব্যয় সংসদের সম্মতির ভিত্তিতে করতে হয়।
৪। বিচার বিষয়ক ক্ষমতাঃ সংবিধান লঙ্ঘন, গুরুতর অরাধ, দৈহিক ও মানুসিক অসুস্থতা ও অক্ষমতার জন্য সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে। প্রয়োজনে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও ন্যায়পালকে অপসারণ করার ক্ষমতাও সংসদের রয়েছে। এ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিচার সংক্রান্ত কাজ সংসদ পরিচালনা করে।
৫। নির্বাচন সংক্রান্ত কাজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, ন্যায়পাল ইত্যাদি পদের নির্বাচনি ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যাস্ত। সংসদের বিভিন্ন কমিটি নির্বাচন করার ক্ষমতাও সংসদের রয়েছে।
৬। অপসারণ মূলক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতি,
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, ন্যায়পাল ইত্যাদি পদের নির্বাচনি
ক্ষমতা যেমন জাতীয় সংসদের ওপর ন্যাস্ত, তেমনি তাদের অপসারণের ক্ষমতাও জাতীয় সংসদের হাতে ন্যাস্ত। এদের কারো বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আসলে জাতীয় সংসদ আনীত অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
৭। সংবিধান সংরক্ষণ ও সংশোধনঃ সংবিধানের আমান্তদার হিসেবে সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবিধানের যেকোনো সংশোধনীও সংসদে উত্থাপিত ও গৃহীত হয়।
৮। মুলতুবি প্রস্তাবের ক্ষমতাঃ জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হচ্ছে মুলতুবি প্রস্তাব। স্পিকারের অনুমতিক্রমে অন্য কাজ স্থগিত রেখে সংসদে এ প্রস্তাবের মাধ্যমে রাষ্ট্র বা জনজীবনের জরুরী বিষয় উপস্থাপন করা হয় যাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নীতি, কর্মসূচী, হস্তক্ষেপ বা প্রতিকার চাওয়া হয়।
৯। সরকারকে জবাবদিহি করার ক্ষমতাঃ বাংলাদেশের মন্ত্রীসভা যৌথভাবে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। এ দায়বদ্ধতার কারণে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী যে কোন সময়ে সংসদে জবাবদিহিতার সম্মূখীন হতে পারেন। যা সরকারের এ সংসদীয় জবাবদিহিতার একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া।
১০। অন্যান্য ক্ষমতাঃ সুপ্রিম কোর্ট ব্যতীত অন্যান্য আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে। যুদ্ধ ঘোষণা ও আন্ত্ররজাতিক চুক্তি অনুমোদন করার ক্ষমতাও সংসদের। স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত বিধি ও প্রবিধান সংসদ প্রণয়ন করে।
No comments:
Post a Comment