আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা
রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন মনীষীর যে চিন্তা, ইতিহাসে একেই রাষ্ট্রচিন্তা বলে অভিহিত করা হয়।
আর প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় গতানুগতিক রাষ্ট্রচিন্তাকে উপেক্ষা করে সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র নিয়ে নতুন নতুন যে চিন্তা ও গবেষণা তাই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা।
"পঞ্চদশ শতাব্দীর পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগের অবসান হয়ে আধুনিক যুগের সূচনা হয়।" -- আয়েশ উদ্দিন
"Modern political thought may conveniently be said to have its origins in the climate of opinion that was produced by the Renaissance and the Reformation. Yet its more remote originsextend as far back as the sixth century before Christ." -- Jhon Hallowell
মোটকথা, রাষ্ট্র সম্পর্কে যে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে মধ্যযুগীয় চিন্তা ও ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার সূত্রপাত হয়েছে তাই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার যেসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় তার মধ্যে কতিপয় বৈশিষ্ট্য হলো-
১) লোকায়তবাদঃ লোকায়তবাদ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। মধ্যযুগের ধর্ম কেন্দ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা থেকে বের হয়ে আধুনিক যুগে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রচিন্তার শুরু হয়। বর্তমান সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
২) যুক্তিবাদঃ মধ্যযুগে ধর্ম ও রাষ্ট্রের সাথে সাধারণ জনগণের বিরোধিতা করার কোন সুযোগ ছিল না। এটা করা ছিল মহাপাপ। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় যুক্তির প্রাধান্য বিদ্যমান।
৩) জাতীয়তাবাদঃ আধুনিক যুগের রাষ্ট্রের সাথে প্রাচীন ও মধ্যযুগের রাষ্ট্রের মূল পার্থক্য হলো জাতীয়তাবাদ। আধুনিক যুগে জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে জাতিরাষ্ট্র গঠন হয়ে থাকে।
৪) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদঃ আধুনিক যুগ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের যুগ। এই যুগে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সংগঠিত হয়। মানুষ অন্য কারো শাসন, যুক্তি মেনে নিতে অস্বীকার করে।
৫) পুঁজিবাদঃ পুঁজিবাদ আর আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা একে অপরের সাথে অবিচ্ছিন্ন ভাবে জড়িত। আধুনিক রাষ্ট্র আর পুঁজিবাদ আলাদা করে আলোচনা করার সুযোগ নেই।
৬) সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদঃ সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের আলোচনা সব সময়ের রাষ্ট্রচিন্তায় থাকলেও আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তায় এর উপস্থিতি অনেক বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এর প্রভুত্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে বর্তমানে উপনিবেশবাদের নতুন রুপ লক্ষ্যনীয়।
৭) উপযোগবাদঃ জেরিমি বেন্থামের উপযোগবাদের আলোচনা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় এক বিশেষ স্থান দখল করেছে। কেননা উপযোগবাদ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের কথা বলে। ব্যক্তি সুখের জন্য উপযোগবাদ রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের আইন প্রবর্তনের কথা বলেছে।
৮) গণতন্ত্রঃ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ও জনপ্রিয় রাষ্ট্রদর্শন হলো গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র হলো আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য।
০৯) পরিবর্তনশীলতাঃ কোন নির্দিষ্ট মত ও পথকে নিয়ে আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তা আবর্তিত হয়নি। সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা নিজেকে পরিবর্তন করেছে।
১০) রাজনীতি ও ধর্ম পৃথকীকরণঃ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেখা হয়। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া কিংবা জনগণের উপর অত্যাচার করা কোন সুযোগ নাই।
(মোঃ হেলাল উদ্দিন, ৩৩ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা)
No comments:
Post a Comment