যেকোন দেশের শাসনব্যবস্থায় দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কতোগুলো বৈশিষ্ট্য গতানুগতিক এবং কতোগুলো মৌল প্রকৃতির। লিখিত বা অলিখিত, সুপরিবর্তনীয় প্রভৃতি গতানুগতিক বৈশিষ্ট্য। এর বাইরে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা সকল শাসনব্যবস্থায় দেখা যায় না। ব্রিটিশ সংবিধানের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য একে বিশিষ্টতা দান করেছে।
ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সমূহ
১) মূলত অলিখিতঃ সাধারণত সংবিধান বলতে একটি লিখিত দলিলে সংকলিত ও বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুনকে বুঝায়। এ দিক থেকে ব্রিটিশ সংবিধান ব্যতিক্রম। কেননা ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলো কোন একটি দলিলে লিপিবদ্ধ নেই। তবে কিছু অংশ লিখিত আছে অন্যভাবে। যেমন- ১২১৫ সালের মহাসনদ, ১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল ইত্যাদি।
২) এককেন্দ্রিকঃ ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা এককেন্দ্রিক। এখানে সকল শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে রক্ষিত। তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের আইনসভা স্বতন্ত্র।
৩) সংসদীয় গণতন্ত্রঃ ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং ব্রিটেনকে সংসদীয় গণতন্ত্রের মাতৃভূমি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। Mackenzie বলেছেন, "... it is England which is the mother of parliament."
৪) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতিঃ ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম ধারক হিসাবে গণ্য হলেও এখানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হয়নি। তবে বর্তমানে ব্রিটেনে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও নিরপেক্ষতা উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
৫) সুপরিবর্তনীয়ঃ ব্রিটিশ সংবিধান মূলত অলিখিত ও সুপরিবর্তনীয়। যে পদ্ধতিতে সাধারণ আইন পাশ করা হয় সেই একই পদ্ধতিতে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের যেকোন নিয়ম-কানুনকে সংশোধন করা যায়। Finer বলেছেন, "The British Constitution is the most flexible constitution among free States."
৬) দুর্বল বিচারব্যবস্থাঃ মার্কিন বিচারব্যবস্থার ন্যায় বিটিশ বিচারব্যবস্থা তেমন শক্তিশালী নয়। ব্রিটেনের বিচার বিভাগ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন ব্যাখ্যা করতে পারে মাত্র, আইনের বৈধতা বিচার করতে পারে না।
৭) দ্বি-দলীয় ব্যবস্থাঃ ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হয়। Conservative party এবং Labour party প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল। তবে অন্যান্য দু-একটি রাজনৈতিক দল আছে, কিন্তু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
৮) শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রাধান্যঃ ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিকব্যবস্থায় শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির গুরুত্ব অনেক বেশি। Harvery and Bather বলেছেন, "Conventions are the means by which the constitution is made adaptable."
৯) নাগরিকদের অধিকারঃ ব্রিটেনের নাগরিকদের অধিকারগুলো একটি দলিলে লিখিত না থাকলেও প্রচলিত আইনের ভিত্তিতেই এ অধিকারগুলো ভোগ করে থাকে। এছাড়া ১৬২৮ সালের 'অধিকারের আবেদনপত্র', ১৬৮৯ সালের 'অধিকারের বিল', ১৬৭৯ সালের 'হেবিয়াস কর্পাস আইন' ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকারের নিশ্চয়তা।
১০) আইনের অনুশাসনঃ সাধারণ আইনের সর্বাত্মক প্রাধান্য, আইনের চোখে সকলে সমান এবং আইনের দ্বারা জনগনের অধিকার সংরক্ষণ হলো আইনের অনুশাসন, যা ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
১১) পার্লামেন্টের সার্বভৌমিকতাঃ ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় পার্লামেন্টের আইনগত সর্বাত্নক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত। K.C Wheare এর কথায়, "The Supremacy of Parliament is the Cornerstone of the British Constitution."
১২) বিবর্তনের ফলঃ ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র হলো বিবর্তনের ফল। এই বিবর্তনমূলক শাসনতন্ত্র বিভিন্ন প্রথাগত আইন, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, ঐতিহ্য, সংস্কার, আদালতের রায় প্রভৃতিতে ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
এছাড়াও কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তত্ত্ব ও বাস্তবের মধ্যে ব্যবধান, অগণতান্ত্রিক উপাদান, দুর্বল বিচারব্যবস্থা, রাজকীয় প্রজাতন্ত্র ইত্যাদি।
(মোঃ হেলাল উদ্দিন, ৩৩ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা)
No comments:
Post a Comment