শাসক ও শাসিত এ দু’টো পরস্পর বিরোধী এবং বিপরীত প্রত্যয়ের আন্তক্রিয়ার ফলশ্রুতি হলো এলিট তত্ত্ব। গতানুগতিক তত্ত্বের অনুপস্থিতি এবং রাজনীতি বিশ্লেষণে এ পদ্ধতির ব্যর্থতার হাত থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রক্ষার হাতিয়ার হিসাবে এলিট তত্ত্ব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
এলিটের সংজ্ঞাঃ
- এলিট হলো তারাই যারা সমাজের উচ্চপদ ও সম্পদের মালিক। ...... রাইট মিলস
- রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী প্রভাবশালী ভূমিকা পালনকারী সংখ্যালঘু গোষ্ঠই এলিট।...... টি বি বটোমোর
- পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রে যে শ্রেণী প্রভাব, ক্ষমতা, সম্মান, সম্পদ ইত্যাদি উচ্চমাত্রায় অর্জন অ ব্যবহার করে তারাই এলিট।
এলিটের উদাহরণঃ
- রাজনৈতিক এলিট,
- সাংস্কৃতিক এলিট,
- সামাজিক এলিট,
- ধর্মীয় এলিট,
- শিল্প এলিট,
- শ্রমিক এলিট এবং
- শিক্ষা এলিট প্রভৃতি।
প্রধান প্রধান এলিট তত্ত্বঃ
- প্যারেটোর শাসনকারী এলিট তত্ত্ব,
- মস্কার শাসনকারী শ্রেণী,
- মিশেলসের কতিপয় ব্যক্তির শাসন,
- ল্যাসওয়েলের প্রভাবশালী শ্রেণী এবং
- মিলসের প্রাতিষ্ঠানিক এলিট।
এখানে প্রথম দুই জনের তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
প্যারেটোর শাসনকারী এলিট তত্ত্বঃ
প্যারেটো তার “The Mind and Society” গ্রন্থে এলিট তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, এলিট হলো জনসংখ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান এবং প্রত্যেক জনসমষ্টিই এলিট কতৃর্ক শাসিত হয়। আরো বলেন, প্রতিটি সমাজের মানুষেরা প্রধানত দুইটি স্তরে বিভক্ত। যথা- উচ্চস্তর এবং নিন্মস্তর। এখানে উচ্চস্তরের ব্যক্তিবর্গ হলেন এলিট আর নিন্মস্তরের ব্যক্তিরা হলেন অ-এলিট। এলিট শ্রেণীর লোকদের আবার দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- শাসনকারী এলিট এবং অ-শাসনকারী এলিট। তার মতে, যারা শাসনকার্য পরিচালনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত তারা শাসনকারী এলিট আর যারা শাসনকার্যের সাথে যুক্ত নয় এবং নিজের শাসন করার প্রস্তুত হয় তারা অশাসনকারী এলিট।প্যারেটোর মতে, শসনকারী এলিটরা দীর্ঘদিন শাসনকার্য পরিচালনা করে একপর্যায়ে জনগনের উপর কর্তৃতব হারিয়ে ফেলে। এসুযোগে অশাসনকারী এলিটের নিজেদের শসন ক্ষমতায় যাবার উপযোগী করে গড়ে তোলে। এমতাবস্থায় শসনকারী এলিটেরা অশাসনকারী এলিট হয়ে যায়। এভাবে চক্রাকারে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালা বদল হতে থাকে।প্যারেটো তার এলিট আবর্তন তত্ত্বে এলিটের প্রধান দুটি গুণাবলীর কথা বলেছেন। প্রথম পর্যায়ের গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা এবং পরিচালনাগত দক্ষতা। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতা, আনুগত্য, দেশপ্রেম এবং রক্ষণশীলতা।
মস্কার শাসনকারী শ্রেণীঃ
ইতালীয় সমাজ বিজ্ঞানী মস্কা তার “The Ruling Class” গ্রন্থে এলিট তত্ত্বের অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তার মতে, পৃথিবীর প্রতিটা সমাজে দুই শ্রেণীর লোক বাস করে যাদের এক শ্রেণী শাসন করে আর অপর শ্রেণী শাসিত হয়। প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তিরা সংখ্যালঘু, যারা রাজনৈতিক কার্যাদি সম্পাদন করে। পক্ষান্তরে, দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকেরা সংখ্যাগুরু এবং প্রথম শ্রেণী কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তার মতে, অসংঘবদ্ধ সংখ্যাগুরুর উপর সংঘবদ্ধ সংখ্যালঘুর আধিপত্য অনিবার্য। শাসনকারী এলিট গ্রুপের সংখ্যা কম হলেও শাসনক্ষমতা লাভের সকল উপাদান ও কৌশলের মালিক তারা। তারা নিজেদের ক্ষমতা চর্চাকে বৈধতা দানের জন্য এক প্রকার রাজনৈতিক সূত্র প্রবর্তন করে এবং রাজনৈতিক সূত্রকে কার্যকর করার জন্য ন্যায়নীতির প্রতিরক্ষা গ্রহণ করেন। এলিটরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমতব রক্ষার অজুহাতে দেশ শাসন করে। অনেক সময় অসংগঠিত সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে দু’এক জন যোগ্য লোককে ক্ষমতার ভাগ দিয়ে নিজেদেকে সৎ, দেশপ্রেমিক, আইনের অনুসারী ও ন্যায়পরায়ণ হিসাবে প্রমাণের চেষ্টা করেন।এলিট তত্ত্বের সমালোচনাঃ
- সংজ্ঞায়নে সমস্যা,
- নির্বাচকমন্ডলীর ক্ষমতা উপেক্ষা,
- সার্বজনীন নয়,
- গণতন্ত্র বিরোধী এবং
- তাত্ত্বিক দুর্বলতা।
৩৩ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা
No comments:
Post a Comment