Saturday, March 12, 2022

পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ

-------------------------------------------------

পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা সর্বপ্রথম গ্রীক নগর রাষ্ট্রসমূহে বিকাশ লাভ করে। বিশেষভাবে বলা যায় গ্রীক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর হাতে পৌরনীতি ও সুশাসনের উৎপত্তি। তবে সুশাসনের ধারণা বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে।

প্রাচীন গ্রীক ও রোমান যুগে পৌরনীতি ও সুশাসনের চর্চা দেখা যায়। এসময়ে নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশের আলোচনার পাশাপাশি এর রাজনৈতিক কাঠামো, সংগঠন, আইন, শাসন, বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টটল, রোমান দার্শনিক পলিবিয়াস, সিসেরো ও সেনকা প্রাচীন যুগে পৌরনীতি ও সুশাসনের কথা বলেছেন।

মধ্যযুগে এ আলোচনা প্রায় থেকে যায়। কেননা এসময়ে  রাষ্ট্র ও গির্জার মধ্যে দ্বন্দ্ব, সামন্তবাদ, ধর্মভিত্তিক চিন্তা প্রভৃতি কারনে পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়।

আধুনিক যুগে এসে পৌরনীতির ক্রমবিকাশ পরিপূর্ণতা পায়। এসময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ পৌরজীবন, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে বিশাদ আলোচনা করেন। এদের মধ্যে ই.এম হোয়াইট, এফ. আই গ্লাউড, অধ্যাপক লাস্কি, গেটেল, প্রমূখ উল্লেখ্যযোগ্য। তারা রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিবর্তন, প্রকৃতি, কার্যাবলী, রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক, রাজনৈতিক সংগঠন, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন।

বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পৌরনীতি ও সুশাসনের নতুন দিগন্ত প্রসারিত হয়। এ সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, আইডিবি, অন্যান্য দাতা সংস্থা  তাদের আলোচনায় সুশাসন শব্দকে জোড়ালো ভাবে জুড়ে দেন। পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয় রাষ্ট্র, সরকার ও জনগন। আর জনগণকে নিয়েই সুশাসন গড়ে তুলতে হবে। আর তাই সাম্প্রতিককালে সুশাসনকে পৌরনীতির সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

১৯৯২ সালে বিশ্বব্যাংক সুশাসন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দেয় তার Governance and development নামক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, "The manner in which power is exercised in the management of a countrys economic and social resources for development." এর পূর্বে OECD সুশাসন সম্পর্কে ধারনা দেয়।

১৯৯৫ সালে ADB তার Governance "Sound development Management" প্রতিবেদনে সুশাসন সম্পর্কে আলোচনা করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুশাসন নিয়ে আলোচনা করে এবং ১৯৯৯ সালে আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক সুশাসনের উপাদান হিসাবে দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং একটি সক্ষম আইনগত ও বিচারসংক্রান্ত কাঠামোকে উৎসাহ প্রদানকে চিহ্নিত করে। এভাবেই সুশাসনের ক্রমবিকাশ লাভ করে।

সেই প্রাচীন যুগ থেকে পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা শুরু হলেও এর পরিপূর্ণ বিকাশে অনেক সময় লেগেছে এবং সময়ের সাথে সাথে এই ধারণা আরো সসমৃদ্ধ হচ্ছে।


মোঃ হেলাল উদ্দিন

প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান

৩৩ তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার

No comments:

Post a Comment