বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। এ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্য দূরীকরণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, এইডস প্রতিরোধ, বিভিন্ন জাতির আত্ননিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল থেকে এগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারীর সমঅধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসিত।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ যে ভূমিকা পালন করছে-
১) আন্তর্জাতিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশঃ ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে। এ সকল মিশনে বাংলাদেশী সৈন্যরা বিরোধ মীমাংসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ যেকোন আন্তর্জাতিক সংকটে সব সময় সবার পাশে আছে। ইরাক কর্তৃক কুয়েত আক্রমণ, সোভিয়েত কর্তৃক আফগানিস্তানে আগ্রাসন, ভিয়েতনাম কর্তৃক কাম্পুচিয়া দখলসহ সকল আগ্রাসণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। ফিলিস্তিনের ব্যাপারেও বাংলাদেশের অবস্থান পরিস্কার। বাংলাদেশ মনে করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
২) নিরস্ত্রীকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবাদ বিরোধী ভূমিকাঃ 'যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই' বাংলাদেশ এই নীতিতে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ নং ধারায় আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির কথা এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতার কথা বলা হয়েছে। ৬০ নং ধারায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৬৩ সালে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি, ১৯৯৬ সালে পারমাণবিক নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ একটি শান্তি সম্মেলন আয়োজন করে।
৩) বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকাঃ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলন, ১৯৯৭ সালে কিয়েটা সম্মেলন, ২০০২ সালে বিশ্ব টেকসই উন্নয়নসহ সকল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনে স্বাক্ষরিত আবহাওয়া পরিবর্তন কনভেনশন এবং জীববৈচিত্র্য কনভেনশন উভয় চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে এবং ১৯৯৪ সালে অনুমোদন করে। ১৯৮৭ সালে ওজন স্তর ক্ষয়রোধ সংক্রান্ত জটিল প্রটোকলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে, এছাড়া এজেন্ডা ২১- এ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে।
৪) সমুদ্র সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতেঃ সামুদ্রিক সম্পদ ও সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ আহরণে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনে অংশগ্রহণ এবং সমুদ্র বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যার ফলাফল হিসাবে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্র বিষয়ক সমস্যার সুন্দর সমাধান দেখতে পাই।
৫) অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনেঃ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনেও সফল। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর এবং ভারতে অবস্থানরত ৫০ হাজার চাকমা শরনার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনা। ভারতের সাথে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গার পানি বন্টন বিষয়ক ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।
বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরসন, শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা সবসময়ই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার পূর্ণমাত্রায় শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে জাতিসংঘের নীতিমালা যদি সকল রাষ্ট্র মেনে চলে তবে বিশ্বব্যাপী সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
(মোঃ হেলাল উদ্দিন, ৩৩ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা)
No comments:
Post a Comment