Monday, December 15, 2025

জেরিমি বেন্থামের উপযোগবাদ

উপযোগবাদ (Utilitarianism) হল নৈতিক দর্শনের একটি মতবাদ, যা সর্বোচ্চ সুখ বা উপযোগ বৃদ্ধি এবং দুঃখ বা কষ্ট হ্রাসকে নৈতিক কাজের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। এই মতবাদটি সাধারণত জেরেমি বেনথাম (Jeremy Bentham) এবং জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill)-এর কাজের মাধ্যমে পরিচিতি পায়। এর মূল নীতি হল: “সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সুখ অর্জন।”
উপযোগবাদের মূল বৈশিষ্ট্য-
1. সুখ ও দুঃখের পরিমাপ:
উপযোগবাদ অনুযায়ী, মানুষের কর্মের নৈতিকতা নির্ধারণ করা হয় সেই কর্ম কতটা সুখ বাড়ায় বা দুঃখ কমায় তার উপর ভিত্তি করে।
2. সর্বজনীনতাবাদ:
এটি ব্যক্তিগত নয় বরং সামগ্রিক মানব কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়। একক ব্যক্তি নয়, বরং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপকারিতা বিবেচনা করা হয়।
3. ফলাফল-ভিত্তিক নীতি:
উপযোগবাদে কাজের নৈতিকতা বা অনৈতিকতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কাজের উদ্দেশ্য নয় বরং তার ফলাফলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
4. অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ:
নীতিটি নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়াও অর্থনীতি, রাজনীতি, ও সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
উপযোগবাদের দুই প্রধান রূপ-
1. সিদ্ধান্তগত উপযোগবাদ (Act Utilitarianism):
এখানে প্রতিটি পৃথক কাজের উপযোগ বিবেচনা করা হয়। একটি কাজ যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সুখ বাড়ায় তবে সেটি নৈতিক বলে বিবেচিত হবে।
2. নিয়মগত উপযোগবাদ (Rule Utilitarianism):
এখানে একটি নিয়ম বা নীতির সামগ্রিক উপযোগ বিবেচনা করা হয়। যদি একটি নিয়ম অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদে সর্বোচ্চ সুখ অর্জিত হয়, তবে সেই নিয়মকে মেনে চলা নৈতিক বলে ধরা হয়।
উপযোগবাদের সমালোচনা:
1. নৈতিক সিদ্ধান্তের জটিলতা:
অনেক ক্ষেত্রে সুখ বা দুঃখের মাপ নির্ধারণ করা কঠিন, যা নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়াকে জটিল করে তোলে।
2. স্বল্পমেয়াদী বনাম দীর্ঘমেয়াদী উপকার:
কিছু সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে সুখ বাড়াতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।
3. স্বার্থপরতার ঝুঁকি:
ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থরক্ষার জন্য এটি কখনো কখনো ব্যবহার করা হতে পারে।
4. সংখ্যালঘুর অধিকার:
সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের সুখ নিশ্চিত করতে গিয়ে সংখ্যালঘুর অধিকার বা স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

No comments:

Post a Comment