প্রাথমিকে সাড়ে ৩২ হাজারের অধিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিবেন সরকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন স্কেল উন্নীত করায় এ পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদেরও আগ্রহ বেড়েছে।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মোট ১০০ নম্বর । এর মধ্যে লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষায় ৮০নম্বর,আর মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বর।লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।
মৌখিক পরীক্ষায় টিকলে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হবে।যে মোবাইল নম্বরটি দিয়ে আবেদন করেছেন, সেই নম্বরেই সকল আপডেট পাবেন। তাই সেই অবশ্যই নম্বরটি সচল রাখতে হবে।
যেভাবে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে
বিষয়ভিত্তিক বহু নির্বাচনী বা এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে । বিষয়গুলো হচ্ছে ইংরেজি-২০,বাংলা-২০,গণিত-২০, সাধারণ জ্ঞান+বিজ্ঞান+কম্পিউটার-২০। প্রত্যেকটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে।
কোন কোন বিষয় থেকে ২-৩টা প্রশ্ন কম-বেশি থাকতেই পারে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১ নম্বর। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর করে কেটে নিবে অর্থাৎ ৪টি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কেটে নেয়া হবে।
তাই কোন প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত না হয়ে উত্তর দেয়া উচিত হবে না।সতর্কতার সাথে বৃৃত্ত ভরাট করতে হবে। ৮০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লিখিত(এমসিকিউ) পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ।
আপনি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সময় পাবেন ১ মিনিট, যা অন্যান্য সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার তুলনায় সময় একটু বেশি। তবে শুরুতেই জানা উত্তরগুলোর বৃত্ত ভরাট করে ফেলতে হবে।
একটি প্রশ্নে আটকে গেলে তার জন্য বেশি সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যেতে হবে। অনুমাননির্ভর উত্তরের চেয়ে না দাগানোই ভালো। আপনাকে প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
এবারে প্রার্থী কম কিন্তু প্রতিযোগিতা বেশি
গতবারের তুলনায় এবার প্রার্থী অনেক কম।এ বছর সারা দেশে ১৩ লক্ষের মতো প্রার্থী আবেদন করেছেন, গতবার এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ লক্ষ। এ বছর আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ২য় শ্রেণির স্নাতক পাস চাওয়া হয়েছে।তাই গতবছরের তুলনায় আবেদন কম পড়েছে।
তবে ১৩তম গ্রেডে বেতন স্কেল উন্নীত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদেরও আগ্রহ বেড়েছে। তাই অনুমান করা যায়, প্রার্থী তুলনামূলক কম থাকলেও প্রতিযোগিতা কঠিনই হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতির ছক ঠিক করতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কথা চিন্তা করে ২০ শতাংশ পদে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, আগের মতোই ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য এবং ২০ শতাংশ পুরুষ প্রার্থী নিয়ে পদগুলো পূরণ করা হবে।
তাই বিজ্ঞান ছাড়া অনান্য বিষয়ে স্নাতক করা প্রার্থীদের প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে একটু বেশিই পড়াশোনা করতে হবে।
উপজেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতা হবে
নিজ উপজেলাভিত্তিক এই নিয়োগ হবে। তাই সারা দেশের প্রার্থীদের কথা ভেবে ভয় পেয়ে লাভ নেই। নিজ উপজেলার প্রার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় লড়তে হবে।
ধারণা করা যায়, আপনি যদি এমসিকিউ পরীক্ষায় ৮০-র মধ্যে ৬০ পান, তাহলে পাসের ক্ষেত্রে বলা যায় ৫০ শতাংশ নিশ্চিত আর যদি ৭০ শতাংশ পান তাহলে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত!
নিজ উপজেলার প্রার্থীদের পরীক্ষার ওপর তবে বিষয়টি নির্ভর করবে । নারীদের জন্য এটা একটা বড় সুবিধা। এই চাকরির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একজন নারী তাঁর পরিবারকে অনেক বেশি সময় দিতে পারবেন।
যেভাবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন
বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নপত্র সমাধান বা জব সলিউশন প্রস্তুতির জন্য পাবেন। ভালো মানের কোনো একটি জব সলিউশন সংগ্রহ করে নিয়মিত অনুশীলন করুন। তার মধ্যে শুরুতে আমি বলব, বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়ে ফেলুন।
এটার ফলে আপনার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা হবে। বাজারের ভালো মানের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ সহায়িকা বই সংগ্রহ করে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুঝে বুঝে পড়ুন।
বাজারের অনেক বইয়ের মধ্যে কোনটি পড়বেন—এ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন। তাঁদের জন্য পরামর্শ হলো, যেসব বইয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি, বিগত বছরের প্রশ্ন ও এর ব্যাখ্যা রয়েছে, সে বইগুলো কিনবেন।
কিছু বইয়ে মডেল টেস্ট পাবেন। সেগুলো ঘড়ি ধরে বাসায় প্র্যাকটিস করলে পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব প্রশ্ন উত্তর করার চর্চাটা হয়ে যাবে, যেটা ভীষণ দরকার।
যাঁদের গণিতের বেসিক শক্তিশালী নয়, তাঁরা পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত গণিত বইগুলো বুঝে বুঝে অনুশীলন করতে পারেন।
এতে বেসিক শক্তিশালী হবে, পাশাপাশি অনেক প্রশ্নই পরীক্ষায় হুবহু কমন পেতে পারেন! সফল হওয়ার জন্য অনিয়মিত বেশি পড়ার চেয়ে নিয়মিত অল্প পড়াও ভালো। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই একজন মানুষ সফল হয়। তাই প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও বই নিয়ে পড়তে বসুন।
আপনার প্রস্তুতির রুটিন কেমন হবে
সময়, বিষয় ও নিজের সুবিধা মাথায় রেখে রুটিন তৈরি করে ফেলুন। একজনের রুটিন আরেকজনের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
কেননা আপনিই জানেন আপনার কখন পড়তে ভালো লাগে, কোন কোন বিষয়ে আপনার দুর্বলতা, অনান্য প্রয়োজনীয় কাজ করে কতটুকু সময় পড়ার জন্য বের করতে পারেন।
তবে যেহেতু গণিত ও ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর এ দুটি বিষয়েই অনেকের দুর্বলতা থাকে, তাই গণিত ও ইংরেজিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ২+২ ঘণ্টা সময় দিয়ে একটা রুটিন বানিয়ে ফেলতে পারেন।
আর অন্যান্য বিষয় মিলে আরো ২-৩ ঘণ্টা। এভাবে দিনে সব মিলিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা পড়ার সময় রুটিনে রেখে পড়ালেখা করতে পারলে প্রস্তুতি পাকাপোক্ত করা সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment