যারা ইতিমধ্যেই গবেষণা শেষ করে ফেলেছেন বা শেষ করার পথে তারা একটি ভাল গবেষণা পত্র কিভাবে লিখবেন, সেটা অবশ্যই জানেন। কিন্তু সমস্যা হল নতুন দেরকে নিয়ে, যারা গবেষনায় ঢুকবেন বা ঢোকার চেষ্টা করছেন। আজ আমরা জানব, একটি ভালো গবেষণা পত্র লেখার জন্য কি কি স্টেপ আপনি ফলো করবেন। কোনো পেপার লিখতে গেলে প্রথমেই মাথাতেই প্রশ্ন আসে ফরম্যাটিং কিভাবে করবো, রেফারেন্স কিভাবে দেব, কি কি সেকশন রাখবো, ফুটনোট কিভাবে আসবে ইত্যাদি। জার্নাল ভেদে গবেষণা পত্রের ফরম্যাটিং-এ কিছু কিছু পরিবর্তন হয়, তবে মূল কাঠামো সব জাগাতে একই থাকে।
গবেষণা পত্র লেখার প্রথমেই একটি আউট লাইন তৈরি করুন। যেমনঃ ১. টাইটেল ২. এবস্ট্রাক্ট ৩. কী-ওয়ার্ড ৪. ইন্ট্রোডাকশন ৫. বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ৬. রেজাল্ট ও ডিস্কাশন ৭. একনলেজমেন্ট ৮. কনক্লুশন এবং ৯. রেফারেন্স। এরপর এই কাঠামো ধরে ধরে লিখতে থাকুন।
১.টাইটেল:
জার্নাল পেপারের টাইটেল বা শিরোনাম দেওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গবেষণা
পত্রটি মূলত কি নিয়ে, সেটার উপরে বা কিছু স্পেসিফিক কি-ওয়ার্ড জুড়ে দিয়ে
সুন্দর-সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিশ্লেষনাত্মক একটি প্রাসঙ্গিক শিরোনাম ঠিক
করবেন। টাইটেলের নিচে অথর লিস্টে শিক্ষার্থীর নাম, সুপারভাইজারের নাম ও
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন অবদান যারা রেখেছেন তাদের নাম রাখতে হবে।
এফিলিয়েশনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং অথরদের ইমেইল আইডি এবং
এড্রেস দিতে হবে।
2. এবস্ট্রাক্ট: এবস্ট্রাক্ট
বা সারমর্ম হল মূল গবেষণার সংক্ষিপ্ত সার। সাধারনত ৫০০ বা তার কম শব্দের
মদ্ধ্যেই পুরো সারমর্ম লিখতে হয়। জার্নালের গাইড লাইন অনুযায়ী, অবশ্যই
আপনার পেপারের গুরুত্ব অনুসারে কিছু ভুমিকা দিতে হবে। এরপরে খুব সংক্ষেপে
পেপারে মূল কি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, কি কি মেথড ব্যবহার হয়েছে তার
উল্লেখ করতে হবে। রেসাল্ট-ডিস্কাশনের কিছু অংশও এখানে যুক্ত করা যেতে পারে।
3. কী-ওয়ার্ড: ৫/৬
টি শব্দ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার লেখাটির মূল বিষয় পরিস্কার করে ফেলতে
হবে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক টার্ম, প্যামিটারেরগুলোর নাম কীওয়ার্ড হিসাবে
ব্যবহার করতে পারেন। টাইটেল থেকেও কিছু মূল শব্দ এখানে লিখতে পারেন।
4. ইন্ট্রোডাকশন: ইন্ট্রোডাকশন
হল রিসার্চ পেপারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইন্ট্রোডাকশনে সাম্প্রতিক
রেফারেন্স যুক্ত আপনার গবেষণা রিলেটেড কিছু কাজ উল্লেখ করতে হবে, বিশেষ করে
যেই জার্নালে পাঠাবেন- সেই জার্নালে প্রকাশিত কিছু পেপার অবশ্যই যুক্ত
করবেন। এই অংশে লেখার স্কোপ, তাতপর্য, গুরুত্ব, উদ্দেশ্য, আপনার পেপারের
মূল আলোচ্য সমস্যার বর্নণা করতে হবে।
৫. বিষয় ভিত্তিক আলোচনা: এই
অংশটি রিসার্চ পেপারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনার রিসার্চ পেপারের
রেজাল্টের প্যারামিটারগুলো এখানে বর্ননা করতে হবে। যেসব
ইকুপমেন্ট-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তার পরিচিতি ও বর্ননা এখানে দিতে
হবে। আপনার রিসার্চ পেপারে যে মেথডলজি ব্যবহার করেছেন, সেটা এখানে উল্লেখ
করতে হবে।
৬. রেজাল্ট ও ডিস্কাশন:
এই সেকশনে গ্রাফ ও টেবিল রাখতে হবে। আপনি যে মেথডলজি ব্যাবহার করেছেন, তার
বাস্তব রেজাল্ট এখানে উল্লেখ করতে হবে। প্রতিটি টেবিল ও গ্রাফের/চার্টের
বর্ননা পাশাপাশি রাখতে হবে। ডিস্কাশনে প্রাসঙ্গিক কিছু পেপারের রেজাল্টের
সাথে প্রদত্ত পেপারের রেজাল্টের তুলনা রাখলে ভালো হয়।
৭. কনক্লুশন: রেজাল্ট
সেকশনে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ন তথ্য এইখানে পয়েন্ট আকারে লিখতে হবে। অবশ্যই
কিছু নিউমেরিক্যাল রেজাল্ট থাকতে হবে, শুধু তুলনামূলক আলোচনা থাকলে চলবে
না। আপনার পেপারের কি কি সীমাবদ্ধতা আছে তা এখানে উল্লেখ করবেন। এছাড়া এই
পেপারের মেথডলজি ব্যাবহার করে ভবিষ্যতে কি কি কাজ করা যেতে পারে তা অবশ্যই
উল্লেখ করবেন।
৮. একনলেজমেন্ট: আপনার
ল্যাব এসিস্টেন্ট, সহকারী, পরামর্শদাতা, আর্থিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান,
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এই সমস্ত কিছুই এই অংশে উল্লেখ করবেন।
৯. রেফারেন্স: এটি
পেপারের একবারে শেষে উল্লেখ করতে হবে। রেফারেন্স লেখার অনেক পদ্ধতি আছে।
আপনি যে জার্নালে পাঠাবেন, সেখানে কোন পদ্ধতিতে লিখতে বলছে সেটা ফলো করুন।
যেমনঃ হার্ভার্ড, নাম্বারিং সিস্টেম। রেফারেন্স সাজানোর অনেক সফটওয়ার আছে,
যেমনঃ END NOTE(http://www.endnote.com/ ), ProCite
(http://www.procite.com/ ) ইত্যাদি।
(মোঃ হেলাল উদ্দিন, ৩৩ তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা)
No comments:
Post a Comment