Monday, September 16, 2024

সাম্য কী? সমাজ জীবনে সাম্যের গুরুত্ব আলােচনা কর।

 ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্য সম্পর্কিত আলােচনা সর্বকালের একটি বহুল আলােচিত বিষয়। প্রাচীনকালের গ্রিক দার্শনিকগণ থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ পর্যন্ত সকলেই সাম্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন। সাম্য ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যুগে যুগে মানুষ রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে শামিল হয়েছে। সাম্য ও স্বাধীনতার জন্য মানুষের আত্মত্যাগের নজির ইতিহাসে অসংখ্য।

সাধারণ অর্থে সাম্যঃ সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে বুঝায় সকল মানুষই সমান। তাই প্রত্যেকে সমান সুযােগ-সুবিধা, সমান অধিকার ও স্বাধীনতা ভােগ করবে। বাস্তবে মানুষে মানুষে শারীরিক, মানসিক গঠন ও গুণগত যােগ্যতার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পার্থক্য বর্তমান। রাষ্ট্র যদি একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও একজন সাধারণ শ্রমিককে এই মূল্যায়ন করে, তাহলে সমাজে প্রতিভার বিকাশ হবে না। কিন্তু বর্তমানে চতুর্দিকে সাম্যের জয়গান শােনা যায়। তবে এ সাম্য ভিন্ন অর্থে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সাম্যের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। একেকজন একেকভাবে সাম্যের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন-

প্রফেসার লাস্কি (Prof. Laski) মনে করেন- "It means that no man shall be placed in a society that he can overreach his neighbor to the extent which constitutes a denial of the latter citizenship.(সাম্য হলাে সেরূপ সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা যাতে কোনাে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে অন্যের ব্যক্তিগত সুবিধার বেদীমূলে আত্মবিসর্জন দিতে না হয়।)

অধ্যাপক বার্কার (Prof. Barker) বলেন, 'সাম্য বলতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সকলের সুযােগ-সুবিধার সমতাকে বলা হয়। কিন্তু এর ফলে সকলের ব্যক্তিত্ব সমানভাবে বিকশিত হবে।

অধ্যাপক পিট্রিম সরােকিন (Pitrim Sorokin)-এর মতে, "Equality means equal distribution of ends, means and object to reach humanity apex to exposure." (মানবতার চরম উৎকর্ষসাধনের জন্য ব্যক্তিস্বার্থসমূহের বণ্টন প্রক্রিয়াকে সাম্য বলে।)

উপযুক্ত সংজ্ঞার আলােকে বলা যায়, সাম্য বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সমান সুযােগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

সমাজ জীবনে সাম্যের গুরুত্বঃ আধুনিক সমাজজীবনে সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা যেমন একটি রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য তেমনি রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সফলতার জন্য সাম্য অপরিহার্য। নিম্নে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হলাে-

(১) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেঃ গণতন্ত্রের এক ধরণের অর্থসামাজিক বিষয়। সামাজিক গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে সমাজে মানুষে মানুষে উচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ভেদাভেদ না থাকা। সুতরাং সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(২) ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায়ঃ সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সাম্য স্বাধীনতার পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। কারণ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকলে সবল ব্যক্তিরা দুর্বলদের ওপর হস্তক্ষেপ করে। তাই ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

(৩) সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠায়ঃ সমাজে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্যও সাম্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজে বিরাট অসাম্য থাকলে শান্তি ব্যাহত হয়। কারণ অতি দরিদ্র মানুষেরা জীবিকার তাগিদে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি সমাজ বিরােধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।

(৪) সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ঃ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজে অসাম্য সৃষ্টি হলে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবােধ হ্রাস পায়। ফলে মানুষের প্রতিও মানুষের আস্থা হ্রাস পায়। মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালােবাসা সৃষ্টিতে সাম্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

(৫) নৈতিক মান উন্নয়নেঃ সাম্যবাদী রাষ্ট্রে মানুষের অর্থ উপার্জনের স্বার্থপর প্রয়াস না থাকায় তাদের নৈতিক গুণাবলী উন্নত হয়। রাষ্ট্রের নাগরিকগণ তাদের চরিত্রের খারাপ দিকগুলাে পরিত্যাগ করে আদর্শনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।

(৬) আয় ও সম্পদের সমবন্টনেঃ সাম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ প্রভূত বৈষম্য বিরাজ করে। ফলে ধনী ও দরিদ্র এ দু'শ্রেণীতে সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ধনীরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে ও দরিদ্ররা দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করে। কিন্তু সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্রীয় মালিকানায় সকল সম্পদের ভােগ জনগণ সমানভাবে করতে পারে।

(৭) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায়ঃ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সাম্য ব্যতীত সমাজে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। অর্থনৈতিক সাম্য না হলে সমাজে আয়ের বৈষম্য ও ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মানুষের কর্মের অধিকার ও জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা যায় না।

(৮) নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়ঃ সকল নাগরিক যাতে সমান রাজনৈতিক অধিকার ভােগের সুযােগ সুবিধার উপস্থিতি ও সকল নাগরিক যাতে রাষ্ট্রীয় কার্যে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সাম্যতা নিশ্চিত করে। যেমন প্রত্যেক নাগরিকের ভােটদানের অধিকার, নির্বাচিত হবার অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাম্যের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।

(৯) সামাজিক অধিকার ভােগের নিশ্চয়তাঃ সমাজের সকল সদৃস্য যাতে সমানভাবে সামাজিক অধিকারসমূহ ভােগ করতে পারে, সাম্য তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সামাজিক অধিকার সাম্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

(১০) ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধনঃ ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধনে সাম্য গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলে নৈতিক গুণাবলির মান উন্নয়ন সম্ভবপর হয় না। ফলশ্রুতিতে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশও সম্ভবপর হয় না। সমাজের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও নৈতিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব।

(১১) বৈষম্যের বিলুপ্তি সাধনেঃ সৃষ্টিকর্তা সকল মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করেননি। বিভিন্ন দিক থেকে মানুষে মানুষে ব্যবধান আছে। সমাজে এ প্রকৃতিগত বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মানুষ সমাজে কৃত্রিম বৈষম্য সৃষ্টি না করে। সাম্যের উপলব্ধিই সমাজে কৃত্রিম বৈষম্যের বিলুপ্তি সাধন করতে পারে।

(১২) সুষ্ঠু আইন প্রণয়নেঃ রাষ্ট্রীয় আইনের দৃষ্টিতে মানুষে মানুষে সমান আচরণ করা উচিত। কারণ আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। সমাজে যাতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনােরূপ বৈষম্য না হয় সেজন্য সাম্যের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। সামাজিক বৈষ্যমের অপসারণ করার জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

(১৩) সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেঃ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাম্যের বিকল্প নেই। বলা হয়ে থাকে যেখানে সাম্য নেই সেখানে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। তাই সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমাজে সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।

(১৪) অন্যায়কে প্রতিহত করার জন্যঃ সমাজের বিভিন্ন প্রকার অন্যায় কাজকে প্রতিহত করার জন্য সাম্য ছাড়া সম্ভবপর হয় না। আর তাই সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাম্য সর্বদা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতা পুরােপুরিভাবে ভােগ করতে হলে সাম্যের উপস্থিতি প্রয়ােজন। সাম্য না থাকলে স্বাধীনতা যথেচ্ছাচারে পরিণত হবে। অপরপক্ষে সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে স্বাধীনতাকে সুদৃঢ় করতে হবে। সাম্যনীতি অনুযায়ী সকলের জন্য উপযুক্ত সুযােগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা না করলে, অধিকাংশ লােক স্বাধীনতার সুফল ভােগ করতে পারবে না। কাজেই সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্য সম্পর্কিত আলােচনা সর্বকালের একটি বহুল আলােচিত বিষয়। প্রাচীনকালের গ্রিক দার্শনিকগণ থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ পর্যন্ত সকলেই সাম্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন। সাম্য ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যুগে যুগে মানুষ রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে শামিল হয়েছে। সাম্য ও স্বাধীনতার জন্য মানুষের আত্মত্যাগের নজির ইতিহাসে অসংখ্য।

সাধারণ অর্থে সাম্যঃ সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে বুঝায় সকল মানুষই সমান। তাই প্রত্যেকে সমান সুযােগ-সুবিধা, সমান অধিকার ও স্বাধীনতা ভােগ করবে। বাস্তবে মানুষে মানুষে শারীরিক, মানসিক গঠন ও গুণগত যােগ্যতার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পার্থক্য বর্তমান। রাষ্ট্র যদি একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও একজন সাধারণ শ্রমিককে এই মূল্যায়ন করে, তাহলে সমাজে প্রতিভার বিকাশ হবে না। কিন্তু বর্তমানে চতুর্দিকে সাম্যের জয়গান শােনা যায়। তবে এ সাম্য ভিন্ন অর্থে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সাম্যের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। একেকজন একেকভাবে সাম্যের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন-

প্রফেসার লাস্কি (চৎড়ভ. খধংশর) মনে করেন- "ওঃ সবধহং ঃযধঃ হড় সধহ ংযধষষ নব ঢ়ষধপবফ রহ ধ ংড়পরবঃু ঃযধঃ যব পধহ ড়াবৎৎবধপয যরং হবরমযনড়ৎ ঃড় ঃযব বীঃবহঃ যিরপয পড়হংঃরঃঁঃবং ধ ফবহরধষ ড়ভ ঃযব ষধঃঃবৎ পরঃরুবহংযরঢ়.(সাম্য হলাে সেরূপ সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা যাতে কোনাে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে অন্যের ব্যক্তিগত সুবিধার বেদীমূলে আত্মবিসর্জন দিতে না হয়।)

অধ্যাপক বার্কার (চৎড়ভ. ইধৎশবৎ) বলেন, 'সাম্য বলতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সকলের সুযােগ-সুবিধার সমতাকে বলা হয়। কিন্তু এর ফলে সকলের ব্যক্তিত্ব সমানভাবে বিকশিত হবে।

অধ্যাপক পিট্রিম সরােকিন (চরঃৎরস ঝড়ৎড়শরহ)-এর মতে, "ঊয়ঁধষরঃু সবধহং বয়ঁধষ ফরংঃৎরনঁঃরড়হ ড়ভ বহফং, সবধহং ধহফ ড়নলবপঃ ঃড় ৎবধপয যঁসধহরঃু ধঢ়বী ঃড় বীঢ়ড়ংঁৎব." (মানবতার চরম উৎকর্ষসাধনের জন্য ব্যক্তিস্বার্থসমূহের বণ্টন প্রক্রিয়াকে সাম্য বলে।)

উপযুক্ত সংজ্ঞার আলােকে বলা যায়, সাম্য বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সমান সুযােগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

সমাজ জীবনে সাম্যের গুরুত্বঃ আধুনিক সমাজজীবনে সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা যেমন একটি রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য তেমনি রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সফলতার জন্য সাম্য অপরিহার্য। নিম্নে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হলাে-

(১) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেঃ গণতন্ত্রের এক ধরণের অর্থসামাজিক বিষয়। সামাজিক গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে সমাজে মানুষে মানুষে উচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ভেদাভেদ না থাকা। সুতরাং সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(২) ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায়ঃ সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সাম্য স্বাধীনতার পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। কারণ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকলে সবল ব্যক্তিরা দুর্বলদের ওপর হস্তক্ষেপ করে। তাই ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

(৩) সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠায়ঃ সমাজে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্যও সাম্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজে বিরাট অসাম্য থাকলে শান্তি ব্যাহত হয়। কারণ অতি দরিদ্র মানুষেরা জীবিকার তাগিদে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি সমাজ বিরােধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।

(৪) সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ঃ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজে অসাম্য সৃষ্টি হলে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবােধ হ্রাস পায়। ফলে মানুষের প্রতিও মানুষের আস্থা হ্রাস পায়। মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালােবাসা সৃষ্টিতে সাম্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

(৫) নৈতিক মান উন্নয়নেঃ সাম্যবাদী রাষ্ট্রে মানুষের অর্থ উপার্জনের স্বার্থপর প্রয়াস না থাকায় তাদের নৈতিক গুণাবলী উন্নত হয়। রাষ্ট্রের নাগরিকগণ তাদের চরিত্রের খারাপ দিকগুলাে পরিত্যাগ করে আদর্শনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।

(৬) আয় ও সম্পদের সমবন্টনেঃ সাম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ প্রভূত বৈষম্য বিরাজ করে। ফলে ধনী ও দরিদ্র এ দু'শ্রেণীতে সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ধনীরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে ও দরিদ্ররা দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করে। কিন্তু সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্রীয় মালিকানায় সকল সম্পদের ভােগ জনগণ সমানভাবে করতে পারে।

(৭) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায়ঃ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সাম্য ব্যতীত সমাজে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। অর্থনৈতিক সাম্য না হলে সমাজে আয়ের বৈষম্য ও ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মানুষের কর্মের অধিকার ও জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা যায় না।

(৮) নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়ঃ সকল নাগরিক যাতে সমান রাজনৈতিক অধিকার ভােগের সুযােগ সুবিধার উপস্থিতি ও সকল নাগরিক যাতে রাষ্ট্রীয় কার্যে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সাম্যতা নিশ্চিত করে। যেমন প্রত্যেক নাগরিকের ভােটদানের অধিকার, নির্বাচিত হবার অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাম্যের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।

(৯) সামাজিক অধিকার ভােগের নিশ্চয়তাঃ সমাজের সকল সদৃস্য যাতে সমানভাবে সামাজিক অধিকারসমূহ ভােগ করতে পারে, সাম্য তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সামাজিক অধিকার সাম্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

(১০) ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধনঃ ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধনে সাম্য গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলে নৈতিক গুণাবলির মান উন্নয়ন সম্ভবপর হয় না। ফলশ্রুতিতে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশও সম্ভবপর হয় না। সমাজের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও নৈতিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব।

(১১) বৈষম্যের বিলুপ্তি সাধনেঃ সৃষ্টিকর্তা সকল মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করেননি। বিভিন্ন দিক থেকে মানুষে মানুষে ব্যবধান আছে। সমাজে এ প্রকৃতিগত বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মানুষ সমাজে কৃত্রিম বৈষম্য সৃষ্টি না করে। সাম্যের উপলব্ধিই সমাজে কৃত্রিম বৈষম্যের বিলুপ্তি সাধন করতে পারে।

(১২) সুষ্ঠু আইন প্রণয়নেঃ রাষ্ট্রীয় আইনের দৃষ্টিতে মানুষে মানুষে সমান আচরণ করা উচিত। কারণ আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। সমাজে যাতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনােরূপ বৈষম্য না হয় সেজন্য সাম্যের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। সামাজিক বৈষ্যমের অপসারণ করার জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

(১৩) সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেঃ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাম্যের বিকল্প নেই। বলা হয়ে থাকে যেখানে সাম্য নেই সেখানে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। তাই সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমাজে সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।

(১৪) অন্যায়কে প্রতিহত করার জন্যঃ সমাজের বিভিন্ন প্রকার অন্যায় কাজকে প্রতিহত করার জন্য সাম্য ছাড়া সম্ভবপর হয় না। আর তাই সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাম্য সর্বদা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতা পুরােপুরিভাবে ভােগ করতে হলে সাম্যের উপস্থিতি প্রয়ােজন। সাম্য না থাকলে স্বাধীনতা যথেচ্ছাচারে পরিণত হবে। অপরপক্ষে সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে স্বাধীনতাকে সুদৃঢ় করতে হবে। সাম্যনীতি অনুযায়ী সকলের জন্য উপযুক্ত সুযােগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা না করলে, অধিকাংশ লােক স্বাধীনতার সুফল ভােগ করতে পারবে না। কাজেই সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।

Saturday, September 14, 2024

সামাজিক পরিবর্তনে কার্ল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ মানবসমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল মানবসমাজের ধর্ম। কোনো কোনো সমাজবিজ্ঞানীর মতে সমাজিক পরিবর্তন হলো সমাজের একটি অংশের পরিবর্তন। আবার, কোনো কোনো সমাজবিজ্ঞারে মতে সামাজিক পরিবর্তন হলো গোটা সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন।


সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কিত মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদঃ কার্ল মার্কস প্রদত্ত ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বে মূল বক্তব্যগুলো হলোঃ-

(১) উৎপাদনের দু'টি দিক রয়েছে। যথাঃ ক. উৎপাদন শক্তি, খ. উৎপাদন সম্পর্ক। সাধারণ উৎপাদন শক্তির সাথে উৎপাদনের সম্পর্কের সমন্বয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

(৩) ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনব্যবস্থার গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনশীল। 

(৪) উৎপাদন ব্যবস্থা, সবসময়ই শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করে। কারণ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় দুই ধরনের লোক থাকে। ক. মালিক শ্রেণি, খ. শ্রমিক শ্রেণি। মালিক ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়।

সামাজিক পরিবর্তনের দ্বান্দ্বিক মতবাদঃ সামাজিক পরিবর্তন বিরামহীনভাবে চলতে থাকে। এ পরিবর্তন দলে যেসময় দ্বন্দ্বের মাধ্যমে। Marx ও Hegel সমাজ পরিবর্তনের দুটি মুখ্য উপাদানের কথা বলেছেন।

(ক) প্রযুক্তি বা উৎপাদন শক্তির উন্নতি।

(খ) শ্রেণিসমূহের মধ্যে সম্পর্ক।

কার্ল মার্কস ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। তিনি প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে চলে আসা শ্রেণি বৈষম্যকে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করেছেন ও এর স্বরূপ তুলে ধরেন। তবে হেগেল দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণিবিভাগ করেছেন।

সামাজিক শ্রেণিসমূহের মধ্যে সর্বদা স্বার্থের দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। আসলে সমাজের যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্বই হলো স্বার্থের দ্বন্দ্ব। হেগেলের মতে, যখন কোনো শ্রেণির মধ্যে স্বার্থের আঘাত আসে তখন তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেও সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ পরিবর্তনের ব্যাখ্যায় মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ উভয়ই বেশ গুরুত্বপুর্ণ। মার্কসের ঐতিহাসকি বস্তুবাদ মূলত ঐতিহাসিকদের প্রমাণিত শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাসের বাখ্যা। আর হেগেল দেখিয়েছেন দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে একটি সমাজ চলতে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে চলমান এ দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই একটি সমাজের পরিসমাপ্তি ঘটে ও নতুন সমাজ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে নতুন সমাজের মধ্যেও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
 

 সামাজিক পরিবর্তনে কার্ল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে আলোচনা কর।

Sunday, September 1, 2024

অনার্স ৪র্থ বর্ষের ভাইভা পরীক্ষায় যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে নিজের মেধাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে সর্বোচ্চ নম্বর নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কিছু বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হয়। ভাইভা বোর্ডে কী করা যায়, আর কী করা যায় না- এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। শুধু উত্তর জানলেই হয় না, উত্তর দেওয়ার এবং নিজেকে তুলে ধরার কৌশল জানতে হয়। ভাইভার জন্য কি পড়বেন, ভাইভা বোর্ডে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এবং কোন পরিস্থিতিতে কী করবেন তা নিয়ে এই আলোচনা।

 

কি কি পড়বেন

যেহেতু অনার্স ৪র্থ বর্ষের ভাইভা তাই পড়ালেখাটা ৪র্থ বর্ষের কোর্সগুলো থেকেই বেশি করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো, আপনি যদি নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তবে লিখিত পরীক্ষার জন্য যে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং ক্লাসে শিক্ষক যা যা পড়িয়েছেন তাতেই আপনার ভাইভা প্রস্তুতি হয়ে যাবে। শুধু দরকার হবে একবার রিভিশন দেয়া।

তবে ভাইভা নিয়ে যেহেতু আমাদের ভীতি থাকে তাই ভাইভার আগে অবশ্যই পড়ালেখা করতে হয়। এক্ষেত্রে যা যা পড়তে পারেন- যে বিষয়ে অনার্স করেছেন সেই বিষয়ের বেসিক কোর্সগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। চার বছরে যে কোর্সগুলো পড়া হয়েছে তার নাম, ৪র্থ বর্ষের কোর্সগুলোর নাম এবং যে কোর্সের পরীক্ষা বেশি ভাল হয়েছে ঐ কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেনা। কেননা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপানাকে একটা সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে যাতে ভাইভা বোর্ডকে আপনার অনূকুলে নিতে পারেন। ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষায় আসা অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নত্তোরগুলো ভাল করে পড়তে হবে।

সমসাময়িক বিষয়, খেলাধুলা, বিভিন্ন দিবস, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, পছন্দের কবি-সাহিত্যিক, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, প্রসিদ্ধ স্থান ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। মোটকথা, ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে, আপনি কি পড়বেন আর কি পড়বেন না। তবে যেহেতু এটা একাডেমিক তথা আনার্সের ভাইভা তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোর্সগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখার জন্য যা যা পড়া দরকার তা আপনাকে পড়তে হবে।

 

ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে

অনেকেই ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে বইপত্র পড়তে থাকেন। কেউ কেউ আবার সাক্ষাৎকার শেষ করে বেরিয়ে আসা প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন, কোন কোন প্রশ্ন করা হলো। এ দুটি প্রবণতার কোনোটিই ঠিক নয়। কারণ, বোর্ডে কোন প্রশ্ন করা হবে, তা সাধারণত আগে থেকে ধারণা করা যায় না। তা ছাড়া অন্য প্রার্থীর প্রশ্ন শুনে নিজেকে অস্থির করে তোলারও প্রয়োজন নেই। ভাইভার জন্য পড়াশোনা যদি করতে হয়, আগেই করতে হবে। আর বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়, তা জানার জন্য আগেই পুরোনো প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন।

 

ভাইভা বোর্ডে ঢোকার সময়

ভাইভা বোর্ডে ঢোকার সময় অবশ্যই অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলায় ‘আমি কি ঢুকতে পারি’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো বাক্য বলা ভালো। অনেক সময় বোর্ডের সদস্যরা বেশ দূরে অবস্থান করেন। সে ক্ষেত্রে একটু জোরে আরেকবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যথেষ্ট উচ্চস্বরে দ্বিতীয়বার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি বোর্ডের কোনো সদস্য অনুমতি না দেন, তবে দরজা ধরেই অপেক্ষা করতে হবে। ঢোকার অনুমতি পেলে বোর্ড সদস্যদের কাছাকাছি যাওয়ার পর সালাম বা আদাব দিতে হবে, কিংবা ‘শুভ সকাল’, ‘শুভ বিকেল’ এ রকম সম্ভাষণ করতে হবে। তাঁরা বসার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত বসা যাবে না। সাধারণত বসতে চাওয়ার জন্য আলাদা অনুমতি নেওয়ার দরকার হয় না। তবে আপনাকে বসতে বললে বসার আগে অবশ্যই ‘ধন্যবাদ’ জানাবেন।

 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখা

ভাইভা বোর্ডে সাধারণত লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, কলম এবং অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হয়। কাগজপত্রগুলো এমনভাবে রাখবেন, যাতে যেকোনোটি সহজেই বের করে দেখানো যায়। সাধারণত নিজের কাছেই ফাইল ও অন্যান্য কাগজ রাখতে হয়। কোনো কাগজ দেখতে না চাইলে আগ বাড়িয়ে দেখানোর দরকার নেই।

 

পোশাক

মৌখিক পরীক্ষার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে হালকা রঙের সুতি শাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ির প্রধান রং সাদা হতে পারে। কানে-হাতে খুবই হালকা গয়না ব্যবহার করা উচিত। শাড়ির সঙ্গে উঁচু স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেটি যেন হাইহিল না হয়। মুখে খুব হালকা মেকাপ করতে পারেন। চুল খোলা না রেখে বেণি বা খোঁপা করা যেতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে শার্ট-প্যান্ট বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

ছেলেরা স্ট্রাইপ করা যেকোনো শার্ট পরতে পারেন। প্যান্টের রং কালো হতে পারে। জিন্সের প্যান্ট কিংবা কেডস না পরাই ভালো। কালো চামড়ার জুতা মোজাসহ পরবেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে কোট ও টাই পরার দরকার নেই। পোশাক অবশ্যই পরিষ্কার ও ইস্তিরি করা থাকবে। চুল ছোট করে কাটবেন, দাড়ি শেভ করবেন। যারা দাড়ি রাখেন, তারা সাইজ করে নেবেন। এক কথায় আপনাকে যেন সভ্য মনে হয়। অনেকে ঘড়ি পড়ে থাকেন এবং বারবার ঘড়ির দিকে তাকান, এমন করা থেকে বিরত থাকুন।

 

বসা ও কথার ভঙ্গি

চেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা করে বসবেন। হাত রাখবেন কোলের ওপর, কেনোভাবেই টেবিলের ওপর হাত রেখে কথা বলা যাবে না। মাথা নিচু করে রাখা যাবে না। চোখ রাখতে হবে বোর্ড সদস্যদের চোখের দিকে। চশমা ব্যবহার করলে চশমা নিচু করে ওপরের ফাঁক দিয়ে তাকানো যাবে না। যিনি প্রশ্ন করবেন মূলত তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েই কথা বলতে হবে।

তবে উত্তর দীর্ঘ হলে অন্যদের দিকেও কমবেশি তাকাতে হবে। কথা বলার সময় বেশি উঁচু গলায় কথা বলা যাবে না। আবার এমন মৃদু স্বরেও বলা ঠিক নয়, যাতে অন্যদের শুনতে সমস্যা হয়। প্রমিত উচ্চারণে কথা বলা দরকার। ভাইভা বোর্ডে পালস একটু দ্রুতই চলে, তাই স্বাভাবিক গতির চেয়ে একটু ধীরে কথা বলতে হয়। হাতে একটি রুমাল বা টিস্যু রাখতে পারেন। হঠাৎ হাচি/কাশি এলে রুমাল/টিস্যুতে ঢেকে দেবেন।

 

উত্তর পারা না-পারা

উত্তর পারা না-পারার ওপর ভাইভার নম্বর পুরোপুরি নির্ভর করে না। মঙ্গোলিয়ার মুদ্রার নাম কী, কিংবা মরক্কোর রাজধানীর নাম কী, এসব উত্তর না পারলেও ক্ষতি নেই। তবে কোন প্রশ্ন আপনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেটি বোর্ড সদস্যরা বিশেষভাবে লক্ষ করেন। উত্তর দেওয়ার সময় আপনার ব্যক্তিত্বের সবল দিকগুলোর প্রকাশ ঘটান, দুর্বল দিকগুলো আড়াল করুন। প্রশ্নের উত্তর যদি সুনির্দিষ্ট এককথায় হয়, আর সেটি যদি আপনার জানা না থাকে, তবে বিনীতভাবে বলুন ‘এটি আমার জানা নেই’। তবে আলোচনার যোগ্য কোনো প্রশ্নই ছেড়ে দেবেন না, অবশ্যই কিছু না কিছু বলার চেষ্টা করবেন।

 

সাক্ষাৎকার শেষে বেরিয়ে আসা

ভাইভা শেষ করে বেরিয়ে আসার সময় বিশেষভাবে লক্ষ করবেন কোনো কাগজপত্র ফেলে আসলেন কি না। চলে আসার আগে বলিষ্ঠ গলায় ‘ধন্যবাদ’ বলবেন। বেরিয়ে আসার সময় সরাসরি পেছন দিকটা বোর্ড সদস্যদের দিকে ফিরিয়ে চলে আসবেন না। ঢোকার এবং বেরিয়ে আসার সময় আপনার হাঁটার পদক্ষেপ দৃঢ় হবে।

 

শেষ কথা

সবচেয়ে বড় কথা পুরো সময়টাই আত্মবিশ্বাসী থাকবেন, তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতির কারণ হতে পারে। বোর্ড সদস্যরা কোনো বিষয়ে হাসতে পারেন, কিন্তু তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনার হাসা ঠিক হবে না। তাই বলে পুরো সময়টা একেবারে গুরুগম্ভীর হয়ে থাকারও দরকার নেই। সাবলীলভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কোনো বাক্য অসম্পূর্ণ রেখে কথা থামিয়ে দেবেন না। আবার যে উত্তরটি এক শব্দে দেওয়া যায়, সেটি এক শব্দে না দিয়ে পূর্ণ বাক্যে উত্তর দেবেন। কোনো ধরনের মুদ্রাদোষ থাকলে তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

 

(মোঃ হেলাল উদ্দিন – শিক্ষক, লেখক ও গবেষক)

I‡qe‡cBR, †dmeyK Ges BDwUD‡e †jL‡Ki mv‡_ hy³ n‡Z mvP© Kiæb-

www.helaluddin565.blogspot.com

www.youtube.com/helaluddin565

www.facebook.com/helaluddin565

www.facebook.com/group/helaluddin565

 

ivó«weÁvb wel‡qi mKj †Kv‡m©i n¨vÛ‡bvU, K¬vm jKPv‡ii wfwWI Ges cix¶v msµvšÍ mKj Z_¨ cZ d‡jv Kiæb-

www.rastrobiggyanpath.blogspot.com (ivóªweÁvb cvV)

www.facebook.com/rastrobiggyanpath (ivóªweÁvb cvV)

www.youtube.com/rastrobiggyanpath (ivóªweÁvb cvV)

 

Awf‡hvM, mgm¨v, civgk© I AwfgZmn †h‡Kvb cÖ‡qvR‡b

*     01580-651815